অনেক দিন পর আজ বন্ধ ঘরের চৌকাঠ পেরিয়েছি। মুঠোতে অনেক দিনের অন্ধকার বন্দি করে খোলা আকাশে ছেড়ে দিলাম। পায়ের নিচে নরম সবুজ ঘাসে পা দিতেই শরীরের সমস্ত শিরা উপশিরা, মগজের ছোট ছোট কণিকায় বসে গেলো দখিনা বাতাস। শাড়িটা পড়েই ঘাসের মধ্যে বসে আলতো আদরে সবুজকে বন্ধু করলাম আবার। যদিও সবুজ আমার চীর বন্ধু। মাঝে কিছুদিন কালোকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার আকাশে আজ অনেক দিন পর ভোর হ’ল। সেদিনও এমনি একটা ভোরের অপেক্ষায় সারাদিন পার করে দিযেছি। কত স্বপ্ন বুকে নিযে একেকটা ভোরকে রাতের আধাঁরে ঢেকেছিলাম। অগনিত জোসনা এরই মাঝে হওতো পার হয়েছে জীবন থেকে। ইস! একটা জোসনা যদি আমার হত। সে বিশালতায় হয়তো আমি সবুজ কে নিমন্ত্রণ করতাম, নতুবা সবুজকে আকঁড়ে আবার নতুন ভোরের আশায় থাকতাম। সবুজ শূণ্য হৃদযে মানুষ সবুজ কে আজ আর আহবান করি না। প্রকৃতির বুকে মাথা রাখি। মাংস পিন্ডে গড়া সবুজের বুকেও মাথা রাখবো বলে স্বপ্ন দেখি এখনও।
সবুজ আর আমি সদ্য ফোঁটা শালুকের মতো ছিলাম। টলটলে দীঘির পাড়ে কাঁধে মাথা রেখে কত স্বপ্নের কথা বলেছি। সেদিন মানুষ কে স্বাক্ষী রাখিনি, তবে স্বাক্ষী আছে সেই দীঘির পারের শিমুল গাছ, নিশ্ৰুপ বসে থাকা বসন্ত বৈরী, কচি কচি ঘাস, মাটি, আকাশের বুকে কতশত অজানা পাখি। আরো অবলা প্রাণী।
সমযের বিবর্তনে আজ সব ফ্যাকাসে। অসমযে ডাকে বসন্ত সখা। কোন নিয়মের বালাই নেই। আচ্ছা! এখন নিশ্চই শ্রাবণ মাস, সদ্য জন্মানো শিশু শ্রাবণ| নতুন নতুন বর্ষার জলে ভিজে আছে নরম কোমল ঘাস। মেঘের দিন চলছে। রোদের দেখা নেই। আবার বৃষ্টি আসবে৷ শ্রাবণের সাথে সবুজের মিলন মেলা।
সেদিনও খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ছাতা মাথায় নিরব রাস্তায় হেঁটে চলেছি। যদিও শহরটা এত নিরব কখনও থাকে না। বৃষ্টি আর কাঁদা মাটি ভরা রাস্তা। কিছু গাড়ির আসা যাওয়া চলছে সাথে অল্প কিছু মানুষ বৃষ্টি ভয়ে দৌড়াচ্ছে। তবুও কষ্ট করে হলেও সেদিন আমি টিউনশটা করার জন্য ছুটলাম।
তখন মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি মাত্র। নিজের খরচ আর বাবা মাযের উপর চাপাতে ইচ্ছে করছিল না। তাই দু'চারটা টিউশন করি। নতুন বাসায় যাচ্ছি পড়াতে হবে, কথার হেরফের করবো না বলেই, সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে শেষমেশ বাসাটায় পৌঁছালাম। আর্চয কলিং বেল দিয়েই যাচ্ছি দিয়েই যাচ্ছি, বাসায় কেউ নেই নাকি! কিছুক্ষণ পর দয়া করে দরজাটা খুললেন। হা হয়ে গেলাম, চেয়ে আছি! এ বাড়িতে সবুজ কি করে? প্রশ্নটা করার আগেই সবুজ বললো “কি রে শ্রাবণ তুই! এখানে?” অবাক করা আলতো হাসিতে, আমারও একই প্রশ্ন “তুই কি করিস এখানে? “আমি পড়াতে এসেছি।” সবুজ স্বাগত জানিয়ে বলে-“আয় আয় ভিতরে আয়” সবুজ আর আমি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। একই বিষয়ে। সবুজের বড় একটা গুন হলো ও খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়। আমি এটাকে গুন হিসেবে দেখি না। আমার মতে আপন তাকেই করো, যে তোমাকে আপন করেছে তোমারও আগে। এটা নিয়ে ওর সাথে প্রায়ই ঝগড়াও হ’তো। ওকে এসব বলা আর কলাগাছকে বলা সমান কথা, আমার কথার তোয়াক্কাই করতো না। এটা ওর সরলতা৷ এ যুগে এত সরল মানুষ আছে নাকি?
আমি সোজা ঘরে প্রবেশ করলাম, ওর মামাতো বোনকে পড়াতে হবে, ক্লাস নাইনে পড়ে। কোন ছেলে টিচাস তারা চায় না, তাই আমাকেই ফোন করেছিল। কিন্তু এটা যে সবুজের মামার বাড়ি জানতাম না। হু ও বলেছে মামার বাড়ি থেকে পড়াশুনা করছে, কিন্তু কখনও তো আর সেভাবে সব কিছু জানা হয় নি। জানার তেমন প্রয়োজন বোধই করি নি। ওর মামি আসলো, সবুজ আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, “এ হলো শ্রাবণ, আমরা এক সাথেই পড়ছি। আমার একজন ভালো বন্ধু বলতে পারো”।
সেদিনের মতো কিছুটা সবুজের বোনকে পড়ালাম,গল্প হলো। বৃষ্টি তো ঝরে যাচ্ছে ঝরেই যাচ্ছে, সবুজ অবশ্য আমাকে রিক্সা করার জন্য একদম রেডি। “তুই থাক, আমি হেঁটেই যেতে পারবো, রিক্সা পাওয়া যাবেনা তোর ব্যস্ত হতে হবে না”। বাসায় আসলাম ঠিকই তবে অনেকক্ষানি ভিজেছি সেদিন।।
আমি প্রায় ছয় মাস ধরে সবুজের বোনকে পড়াচ্ছিলাম। বেশ ভালোই পড়াশুনাতে। ইদানিং সবুজ একটু কেমন যেন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই দেখা হ্য। তবে কি যেন নিয়ে একটু বেশি ব্যস্ত। আমাকে বলছে না। একদিন জিজ্ঞেস করে বসলাম, “কিরে এত্ত কি কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছিস, যা একেবারে বলাই যায় না” সেদিন সবুজ সাহস করে বললো “কবিতা লিখছি”। “কি! তুই আর কবিতা” হাসিটা ধরে রাখা কঠিন ছিল। না হেসে পারা গেলো না,সবুজ লিখছে কবিতা। ঐ কি কবিতা লিখছিস বল এখনই বল শুনি” সবুজের মুখটা গম্ভির হয়ে গেছে। “না বলবো না” তোকে বললে তুই আরো মজা করবি, হাসবি, সেটা আমি মেনে নিতে পারবো ” এই শ্রাবণ চল না কোথাও ঘুরে আসি, “ ওরে বাবা নারে, তোর সাথে ঘুরতে গেলে বাসার সাবাই টেনশন করবে” আজ না রে, অন্য কোন দিন সময় হাতে নিয়ে যাবো” “আরে চল না, একটা জিনিস দেখাবো”। “কি দেখাবি কবিতা?” “আরে না, সুন্দর একটা জায়গা, দারুন রে জায়গাটা দেখতে, বেশি দূর না, কাছেই বাসে গেলে একঘন্টা সময় হয়তো লাগবে”। আজ সবুজের কি হলো, হঠাৎ এত রোমান্টিক? যাত্রা পথে প্রশ্নটা বার বার আমাকে তাড়া করছে। ও কি কিছু বলতে চায়? নাকি কিছু দেখাতে চায়? ও যে হাদারাম মুখে তো কিছুই বলতে পারবে না, আবার শুনছি এখন নাকি কবিতাও লিখছে। বারবার দেখচ্ছি আর মুচকি হাসি দিচ্ছি। যদিও বোকার ডিম ওটা খেয়ালই করছে না। শুধু আজে বাজে বক। বক করেই যাচ্ছে, সবটাই সেই যায়গা জুড়ে। কি আছে সেখানে? ধুর আগে তো যাই। সবুজের বায়নার কারণে একটা ক্লাস বাদ দিতে হলো।
আজ সকালটা ঠিক সেদিনের সকালের অনুরূপ। সবুজের লেখা কবিতা ভরা ডায়রিটা আমার কাছে এখন দামি রত্নের মতো মনে হয়। সবুজের প্রচন্ড অভাব দূর করতে মাঝে মাঝেই ডায়রিটা খুলে পড়ি। ওকে খুব কাছ থেকে অনুভব করি। খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। আকশটা কিছুক্ষণ পর পর নিজের চরিত্র পাল্টাচ্ছে। আচ্ছা আমিও কি এমনি ভাবে নিজের চরিত্র পাল্টাচ্ছি? প্রশ্নটা আমার না, সেদিন গাড়িতে ফিরতে ফিরতে সবুজ শেষ কথা টা এটাই বলেছিল, “তুমি আকাশের মতো বার বার নিজের রঙ পাল্টাও কেন?
প্লিজ ঐ বিশাল আকাশের মতো হৃদযে আমাকে ঠাঁই দিতে পারো না?” ঠিক তখনই, উহ! আর কিছু ভাবতে পারছি না। প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করছে। কে যেন আমাকে ধরে আবার সেই অন্ধকার ঘরে নিয়ে গেলো। চোখের সামনে মুহূর্তে কালো পর্দা নেমে আসলো। বার বার চোখ বন্ধ করলে সেই দৃশ্যই ভেসে উঠে।
‘সব আমার দোষ, আমার ভুলেই সবুজ হারিয়ে গেছে। প্রকৃতির বুকে কোথাও সবুজ নেই। সব অন্ধকার, আমি অন্ধকার চাই না, আমাকে সবুজ দাও! আলো দাও! আবার দেহটা নিথর পড়ে রয় সেই অন্ধকার ঘরে। সেই দূর্ঘটনা আমার সব সবুজ কেড়ে নিয়েছে। যদিও আমি তা বিশ্বাস করি না। ওরা সবাই বলে সবুজ আর ফিরবে না। সেদিন চোখ খুলে আমি সত্যিই সবুজকে দেখবো। আবার দু’চোখে সবুজ আঁকবো।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
শুরুতেই শেষ হয়ে যাওয়া একটি ভালোবাসার গল্প। কিন্তু ভালোবাসা কি কখনও পরিসমাপ্তি ঘটে ?
শ্রাবণের চোখে সবুজ ভালোবাসা, আজও অপেক্ষার যন্ত্রণায় অন্ধকারে নিমজ্জিত শ্রাবণ। ফিরে আসবে কি চীর চেনা সবুজ ?
১৪ জুন - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪